কেউ বিদেশে অপরাধ করে দেশে ফিরলে দেশীয় আইনেই তার শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে সদ্য পাশ হওয়া সন্ত্রাস বিরোধী (সংশোধন) বিলে।
মঙ্গলবার বিরোধী দলের ওয়াকআউটের মুখে এ বিলটি পাশ হয়।
বিলটিতে বিদ্যমান আইনের ৫ ধারায় উপ-ধারা (২) ও উপ-ধারা (৩) সংযোজন করে বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রে অপরাধ সংঘটন করে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে, যা বাংলাদেশে সংঘটিত হলে এ আইনের অধীন শাস্তিযোগ্য হত, তাহলে উক্ত অপরাধ বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে বলে গণ্য হবে এবং যদি তাকে উক্ত অপরাধ বিচারের এখতিয়ার সম্পন্ন কোনো বিদেশি রাষ্ট্রে বহিসমর্পণ করা না যায়, তাহলে উক্ত ব্যক্তি ও অপরাধের ক্ষেত্রে এ আইনের বিধানাবলী প্রযোজ্য হবে।
এ ছাড়া আইনে সন্ত্রাস কার্যে অর্থায়ন বিষয়ে তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে সুনির্দিষ্ট বিধান রাখা হয়েছে। সন্ত্রাসী কার্যে জড়িত ব্যক্তি ও সত্ত্বার অপরাধী কর্মকাণ্ডের সংজ্ঞা ও সুনির্দিষ্টকরণে বিধানও রাখা হয়েছে।
নতুন আইনে বিদ্যমান আইনের ২০ ক ধারার পরিবর্তে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন বাস্তবায়নে পদক্ষেপ শীর্ষক নতুন ২০ ক ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে।
এ ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বীকারোক্তি রেকর্ড সম্পর্কিত বিশেষ বিধান, তদন্তকালীন সন্ত্রাসী সম্পত্তি জব্দ বা ক্রোকের বিশেষ বিধান এ আইনে সংযোজন করা হয়েছে। এ আইনে বিভিন্ন কনভেনশনও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সন্ত্রাসী ব্যক্তি ফেসবুক, স্কাইপি, টুইটারের মাধ্যমে আলাপ-আলোচনা, ভিডিওচিত্র, স্থিরচিত্র ব্যবহার করে অপরাধ করলে সেগুলো আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণের বিধান রাখা হয়েছে সদ্য পাশ হওয়া আইনে।
পুলিশের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে অবহিত করে মামলা করতে পারবেন এবং তদন্ত কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন।
মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। উত্থাপনের পর কণ্ঠভোটে বিলটি পাশ পাস হয়।
বিলটি পাসের আগে বিরোধী দলীয় সদস্যরা এর বিরোধিতা করেন।
সমালোচনা করে বক্তব্য দেন বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত চিফ হুইপ শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, শেখ সুজাত মিয়া, রেহেনা আক্তার রানু, আশিফা আশরাফী পাপিয়া ও নিলুফার চৌধুরী মণিসহ সংসদে উপস্থিত বিরোধী দলের অধিকাংশ সদস্য।
তারা বলেন, বিরোধী দলকে দমনের জন্যই এ বিল। এ আইনকে অবশ্যই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে। এর চেয়ে জনকল্যাণমূলক আইন করা ভালো।
বিল পাসের আগে আগে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ উঠে দাঁড়ালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে থামিয়ে স্পিকার তাকে কথা বলার সুযোগ দেন।
এ পর্যায়ে ওয়াকআউটের ঘোষণা দেন মওদুদ। এর পরপরই সংসদ থেকে বেরিয়ে যায় বিরোধী দল।
এর আগে গত ৩ জুন বাজেট অধিবেশন শুরুর দিনে বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ওই দিন স্পিকার এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠান।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সংশোধন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিলটি চূড়ান্ত করা হয় গত ৫ জুন। এরপর গত ৯ জুন রোববার কমিটি জাতীয় সংসদে বিলটি পাঠায়।
এরপর বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে মঙ্গলবার বিলটি পাশ হয়।