প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রদর্শিত টাকা আবাসন খাতে বিনিয়োগের নতুন করে সুযোগ দেওয়ায় মন্দা আবাসিক খাত ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে প্রস্তাবিত বাজেট-পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব নেতারা এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে আরো কিছু দাবিও তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রিহ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট এবং সেই সঙ্গে নতুন ভবনে গ্যাসের সংযোগদানের সিদ্ধান্তের পর আবার আশার আলো দেখতে পাচ্ছে আবাসন খাত। রিহ্যাব মনে করে, এর ফলে শুধু আবাসনশিল্পই নয়, এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরো ২০০টি ঝিমিয়ে পড়া শিল্প আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মো. আব্দুর রশীদ, লিয়াকত আলী ভুইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুল ইসলাম বাদল প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভুইয়া বলেন, আবাসন খাতে কালো (অপ্রদর্শিত) টাকা বিনিয়োগ হলে এ শিল্প আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠবে। এর পক্ষে যুক্তি হিসেবে তিনি গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অবৈধভাবে অর্থ বিনিয়োগের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গত তিন বছরে মোট এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে বিদেশে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর বেশির ভাগই মালয়েশিয়ার আবাসনশিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভবনের অগি্ননির্বাপণযন্ত্র আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা, জেনারেটরসহ মূলধনী যন্ত্র ও হেভি ট্রান্সফরমারের দাম কমানোর ইঙ্গিত এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ১১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখাসহ বাজেটের অনেক প্রস্তাব আবাসিক খাত উন্নয়নে সহায়ক হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মধ্যবিত্তের আবাসন চাহিদা পূরণ এবং আবাসন ব্যবসার স্বার্থে এক হাজার ৫০০ বর্গফুটের কম আয়তনের ছোট ফ্ল্যাট কিনতে ৮ থেকে ৯ শতাংশ ঋণসুবিধা আবারও চালু এবং এ খাতে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা পুনরর্থায়নের দাবি জানানো হয়। রিহ্যাব নেতারা আরো বলেন, ১২ শতাংশের উচ্চ হারের নিবন্ধন ফির কারণে সরকারের রাজস্ব যেমন কমছে, ক্রেতা-বিক্রেতারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ হার বিদ্যমান হারের অর্ধেকে নামিয়ে আনা এবং সেকেন্ডারি ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানানো হয়।
মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘গত দুই বছরেরও বেশি সময় পর্যন্ত গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকা, শর্তযুক্ত বিদ্যুৎ সংযোগ, ক্রেতা পর্যায়ে ঋণের অভাব, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ না থাকা, জমির মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সেবা প্রদানকারীদের সমন্বয়হীনতা, উচ্চমাত্রার ব্যাংকঋণের সুদের হার এবং নকশা অনুমোদনের দীর্ঘসূত্রতার কারণে এই শিল্প হুমকির মুখে পড়ে। আর প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের সুদৃষ্টি এবং আবাসন খাতে গ্যাস সংযোগের সিদ্ধান্তে আমরা আবার আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।’